জিহ্বা ফুলে যাওয়ার যত কারণ

জিহ্বা হলো আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। জিহ্বা খাবারের স্বাদ নিতে এবং খাবার গিলতে সাহায্য করে। এছাড়া শ্রোতাদের অনবরত কথা শুনাতে এবং কেউ বিরক্ত করলে তাকে উচিত শিক্ষা দিতেও জিহ্বার জুড়ি মেলা ভার। কিন্তু কথায় আছে, দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা নেই। ঠিক তেমনি যতক্ষণ না আমাদের জিহ্বায় কোনো অসুখ হয় বা কোনো কারণে ফুলে যায়, আমরা এর গুরুত্ব বুঝি না।
জিহ্বা যদি ফুলে যায় তাহলে ব্যাপারটি খুব সহজেই আমাদের নজরে আসে। জিহ্বা ফুলে গেলে অনেকেই শুরুতে খুব আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তবে সাধরণভাবে জিহ্বা ফুলে যাওয়া গুরুতর কোনো সমস্যা নয়। বিভিন্ন শরীরবৃত্তীয় কারণে এমনটা হতে পারে। তাই শুরুতেই ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। বলেন, মেডএক্সপ্রেসের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ডা. ক্লেয়ার মরিসন।
তবে যদি খুব দ্রুত জিহ্বা ফুলতে থাকে এবং পাশাপাশি গলাব্যথা বা গলা শক্ত হয়ে যায়, শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, মাথা ঘুরতে থাকে বা অজ্ঞান হওয়ার উপদ্রব হয় তাহলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। কারণ আপাতদৃষ্টিতে সমস্যাটি খুব সাধারণ মনে হলেও, এর কারণে আপনার জীবন হুমকির মুখে পড়তে পারে।
জিহ্বা ফোলা যদি ১০ দিন বা তার বেশি স্থায়ী হয় অথবা যদি সমস্যা ক্রমাগত বাড়তেই থাকে এবং ক্লান্তি বা জ্বর অনুভুত হয় তাহলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত।
আপনার জিহ্বা ফুলে যাওয়ার কারণ কি হতে পারে? বিশেষজ্ঞরা সম্ভাব্য ১০টি কারণ চিহ্নিত করেছেন। তা নিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ থাকছে প্রথম পর্ব।
* আঘাতের কারণে
ডা. ক্লেয়ার মরিসনের ভাষ্যমতে, জিহ্বা মুখের ভেতরের একটি সংবেদনশীল অঙ্গ হওয়ায় দাঁতের মাধ্যমে অনাকাঙ্ক্ষিত কামড় লেগে, ভাঙা দাঁতের তীক্ষ্ণ অংশে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে, রুক্ষ ফিলিং এবং নকল দাঁতের কারণে যেকোনো সময় আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারে। অথবা অতিরিক্ত গরম খাবার, প্রচুর মসলাযুক্ত খাবার (মরিচ এবং তরকারি) বা অতিরিক্ত অ্যাসিডিক কোনো খাবার (প্রচুর টক বা মিষ্টি) আপনার জিহ্বায় জ্বালাপোড়া বা ফুলে যাওয়ার উদ্রেক করতে পারে।
তিনি এ ধরনের সমস্যার কিছু সমাধান দিয়েছেন। যেমন- বরফের কিউব চুষতে পারেন, আইবুপ্রোফেন ওষুধ খেতে পারেন এবং ইনফেকশন বন্ধ করতে মাউথওয়াশ ব্যবহার করতে পারেন। তবে যদি দাঁতের জন্য এমন হয় তাহলে স্থায়ী সমাধান পেতে হলে ডেন্টিস্টের সহায়তা নেওয়া উচিত।
* মাউথওয়াশের জন্য
লস অ্যাঞ্জেলেসভিত্তিক বোর্ড-সার্টিফায়েড চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. টিসিপ্পোরা শাইনহাউস বলেন, কিছু টুথপেস্ট এবং মাউথওয়াশের উপাদানগুলো আপনার জিহ্বায় ফোলাভাব সৃষ্টি করতে পারে। এই উপাদানগুলোর ব্যবহার বন্ধ করার আগ পর্যন্ত সমস্যার সমাধান হবে না। জিহ্বার এই সমস্যাগুলো সাধারণত হাইড্রোজেন পার অক্সাইড (দাঁত সাদা করতে টুথপেস্টে ব্যবহার করা হয়), অ্যালকোহল (মাউথওয়াশে থাকে), বেকিং সোডা (টুথপেস্টের অন্যতম উপাদান) এবং সিনামেটস (চুইংগামে থাকে) উপাদানের কারণে হয়ে থাকে।
ডা. শাইনহাউস আরো বলেন, ঠিক কোন উপাদানটির জন্য আপনার জিহ্বা ফুলে যাচ্ছে তা যদি নিশ্চিত না হোন, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করে অ্যালার্জি পরীক্ষা করিয়ে নিতে পারেন।
* অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন
শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউন সিস্টেম যখন কোনো কিছুর প্রতি হাইপার অ্যাকটিভ হয়ে যায়, তখন তার প্রতিক্রিয়া হচ্ছে অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন। ফলমূল, বাদাম, শাকসবজি, দুধ এমনকি কোনো পোকামাকড়ের কামড় থেকেও অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন হতে পারে। ডা. মরিসন বলেন, শরীরে হিস্টামিন নিঃসরণের ফলে ছোট রক্তনালীগুলো সংকীর্ণ হয়ে এবং টিস্যুগুলোতে একধরনের তরল সঞ্চারণের জন্যই অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন দেখা দেয়। অ্যাঞ্জিওডিমা অ্যালার্জি জিহ্বা, ঠোঁট এব্বং মুখে ফোলাভাব সৃষ্টি করে। অ্যান্টিহিস্টামিন এবং ওরাল স্টেরয়েড ব্যবহার করে এরকম এলার্জির চিকিৎসা করা হয়।
গুরুতর অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশনের জন্য শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যাও দেখা দিতে পারে। তাই যারা জানেন কোন কোন জিনিসে আপনার অ্যালার্জি আছে, সেসব জিনিস অবশ্যই এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবেন। এছাড়া সঙ্গে সবসময় এপিপেন রাখবেন।
* নির্দিষ্ট কোনো ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
সবচেয়ে বেশি যে ওষুধগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন এবং জ্বিহ্বা ফুলে যাওয়ার ঘটনা ঘটে, তা হচ্ছে রক্তচাপের ওষুধ এসিই ইনহিবিটর। ক্যালিফোর্নিয়ার প্রোভিডেন্স সেন্ট জোন’স হেলথ সেন্টারের অটোলারিঙ্গোলজিস্ট (ইএনটি) লারিঙ্গোলজিস্ট ডা. ওমিদ মেহদিজাদ বলেন, ‘এগুলো সম্ভাব্য প্রাণঘাতী জিহ্বা ফোলা হতে পারে যা থেরাপির সময় যেকোনো দেখা সময় ঘটতে পারে।’ তিনি আরো বলেন, ‘এসিই ইনহিবিটর প্রথমবার ব্যবহারে সাধারণত এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায় না।’
ডা. মরিসন বলেন, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ওষুধ (যেমন অ্যাসপিরিন এবং আইবুপ্রোফেন) এবং বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের কারণেও (যেমন- পেনিসিলিন, অ্যান্টিভাইরালস) অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে এসব ওষুধ ব্যবহার করা বন্ধ করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। অ্যান্টি-হিস্টামিনস, স্টেরয়েডস এবং ইন্ট্রামাস্কুলার এড্রোনিল এগুলো তীব্রতা বুঝে ব্যবহার করতে হবে।
ভিটামিনের ঘাটতি
ডা. মরিসনের ভাষ্যমতে, ভিটামিন বি-১২ এবং ফোলেট এর অভাবে জিহ্বা ফুলে যেতে পারে বা লাল হয়ে যেতে পারে। এছাড়া হাত-পায়ের ব্যথা, ক্লান্তি এবং দুর্বলতাও দেখা দিতে পারে। তিনি আরো বলেন, আয়রনের অভাবেও জিহ্বায় ঘা, জিহ্বা মসৃণ এবং ফ্যাকাসে হয়ে যেতে পারে, শ্বাসকষ্ট হতে পারে, ত্বক ফ্যাকাসে হয়ে যেতে পারে। মাছ, মাংস, ডিম, শাক, শিম এবং মসুর ডাল জাতীয় খাবারের মাধ্যমে এই ভিটামিনগুলোর ঘাটতি পূরণ করতে পারেন। তবে শরীরে গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন এবং খনিজের ঘাটতি চিহ্নিত করতে চিকিৎসকের কাছ যাওয়া উচিত। চিকিৎসক আপনার ভিটামিন ঘাটতির কারণ বুঝে নির্দিষ্ট সাপ্লিমেন্ট দেওয়ার পাশাপাশি খাদ্যতালিকা পরিবর্তন করতে পারেন।
সূত্র: রাইজিংবিডি