
বাংলাদেশে গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে আলোচিত ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের সময় বহু টাকা, মাদক, অস্ত্র ও দেহরক্ষী নিয়ে মি. শামীমকে গ্রেপ্তার করার ঘটনা দেশটিতে বিরাট আলোচনার জন্ম দেয়। তাকে গ্রেপ্তার ও এবং এ সংক্রান্ত অভিযান নিয়ে দিনের পর দিন ফলোআপ সংবাদ ছাপা হয় দেশটির গণমাধ্যমগুলোতে।
তিনি আবার নতুন করে আলোচনায় আসেন গতকাল শনিবার, যখন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয় যে মি. শামীম এক মাস আগে উচ্চ আদালত থেকে দুটি মামলায় জামিন পেয়েছেন, যে খবর এতদিন প্রকাশ্যেই আসেনি।
এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তুমুল বিতর্ক চলার প্রেক্ষাপটে রবিবার রাষ্ট্রপক্ষ মি. শামিমের জামিন বাতিল চেয়ে আবেদন জানান হাইকোর্টে।
এই আবেদনের ভিত্তিতে, হাইকোর্ট রবিবার তার জামিন বাতিল করেন।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এফ আর খান বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসে জি কে শামিমের জামিন আবেদনে তথ্য গোপন করা হয়েছিল। আবেদনে তার নামের সঙ্গে জি কে শামীম নামটিও উল্লেখ করা হয়নি।
তবে জি কে শামীমের আইনজীবী মমতাজউদ্দিন মেহেদি সাংবাদিকদের বলেছেন, নিয়ম মেনেই জামিন আবেদন করা হয়েছে। হয়তো জি কে শামীম বলেই সরকার এই জামিনের বিরুদ্ধে আবেদন করেছে।
গত চৌঠা ফেব্রুয়ারি মাদক মামলায় জামিন পেয়েছিলেন জি কে শামীম। দুইদিন পরে ছয়ই ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের আরেকটি বেঞ্চ থেকে অস্ত্র মামলায় ছয় মাসের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পান। তবে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিরা জানিয়েছেন, এই জামিনের বিষয়ে তারা অবগত ছিলেন না।
পুলিশের বিশেষ বাহিনী র্যাব গত বছরের ২০শে সেপ্টেম্বর যুবলীগের সাবেক নেতা ও ঠিকাদার জি কে শামিমের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে সাতজন দেহরক্ষীসহ আটক করে।
সেসময়কার ক্যাসিনো বিরোধী অভিযান এবং সরকারি দলের সহযোগি সংগঠনগুলোতে শুদ্ধি অভিযানের প্রেক্ষাপটে এই গ্রেপ্তারের ঘটনাটি টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হয়।
র্যাব সেসময় বলেছিল, টেণ্ডারবাজি ও চাঁদাবাজির অভিযোগে জি কে শামীমকে আটক করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অবৈধ উপায়ে বিদেশে অর্থ পাচারেরও অভিযোগ রয়েছে।
জি কে শামীমের জামিন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন হাইকোর্ট
অভিযান চালিয়ে তারা জি কে শামীমের বাড়ি ও অফিস থেকে নগদ প্রায় পৌনে দুই কোটি টাকা এবং ১৬৫ কোটি টাকার এফডিআর বা আমানতপত্র জব্দ করেছেন। এসময় মদ ও অস্ত্রও উদ্ধার করা হয়।
যদিও অস্ত্রগুলোর বৈধ লাইসেন্স ছিল, কিন্তু এসব অস্ত্র দিয়ে অবৈধ কাজ হতো বলে অভিযোগ রয়েছে বলে তখন উল্লেখ করেছিল র্যাব।
ঢাকায় জুয়া: ক্লাব হাউজি থেকে ক্যাসিনো
জুয়া নিয়ে বাংলাদেশের আইনে যা বলা আছে
জি কে শামীমের বিরুদ্ধে আরও দুইটি মামলা রয়েছে। সেসব মামলায় তার জামিন হয়নি।
গত বছরের ২০শে সেপ্টেম্বর ঢাকার নিকেতনের কার্যালয় ও বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
অভিযান চলাকালেই র্যাবের কর্মকর্তারা বিবিসি বাংলাকে জানান, যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সমবায় সম্পাদক জি কে শামীম। নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতিও তিনি। তবে পরে যুবলীগ থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়।
অভিযান শেষে বিবিসি বাংলাকে তিনি জানিয়েছেন, টেণ্ডারবাজি ও চাঁদাবাজির অভিযোগে জি কে শামীমকে আটক করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অবৈধ উপায়ে বিদেশে অর্থ পাচারেরও অভিযোগ রয়েছে বলে তিনি জানান।
পরে তার বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক, অর্থ পাচার ও জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে চারটি মামলা হয়।
ইতোমধ্যে অস্ত্র ও মাদক মামলায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছে র্যাব।
গত বছরের ২১শে অক্টোবর জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে জি কে শামীমের বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলায় তার বিরুদ্ধে ২৯৭ কোটি ৯ লাখ টাকা জ্ঞাত আয়বর্হিভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
সূত্রঃ BBC NEWS বাংলা