পহেলা বৈশাখ উদযাপন নেই, সংকটে মৌসুমি শ্রমিকরা

করোনাভাইরাসের কারণে থমকে গেছে দেশ। দেশের প্রান্তিক মানুষের জীবনে ভয়াবহ সংকটের পাশাপাশি অর্থনীতিতেও বড় প্রভাব ফেলছে। বাঙালির অসম্প্রদায়িক চেতনার বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ এবার ঘটা করে উদযাপন হচ্ছে না। থেমে গেছে মঙ্গল শোভাযাত্রা আয়োজন।
এই শোভাযাত্রার নানা অনুষঙ্গ তৈরিতে প্রয়োজন হয় মৌসুমি শ্রমিকের যারা কেবল পহেলা বৈশাখকে কাজের প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু এবার বৈশাখী আয়োজন না থাকায় সংকটে পড়েছে এই শ্রমিকরা। আর সংকটে পড়া মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছে মঙ্গল শোভাযাত্রা আয়োজনের দায়িত্বে থাকা চারুশিল্পীরা।
নিজেরা ব্যক্তি উদ্যোগে তহবিল সংগ্রহ করে এসব মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে। করোনায় ঘরবন্দি শিল্পীরা অলস বসে না থেকে চিত্রকর্ম আঁকছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সেই ছবি নিয়ে প্রদশর্নী আয়োজন করবে।
‘মুক্ত করো ভয়, আপন মাঝে শক্তি ধরো, নিজেরে করো জয়’ এই স্লোগানকে প্রতিপাদ্য রেখে বৈশাখ ১৪২৭ উদযাপন করার কথা ছিলো! ‘মানুষ ধ্বংস হতে পারে কিন্তু মানুষ পরাজিত হয় না’ এই বৈশিষ্ট্যের কারণেই মানুষ সেরা। বর্তমানের সংকট থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সর্বশক্তি নিয়ে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। এবং শেষ পর্যন্ত মানুষ জয়ী হবেই।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, পহেলা বৈশাখ ১৪২৭ কে সামনে রেখে কয়েকটি কার্যক্রম হাতে নিয়েছে তরুণ চারুশিল্পীরা। মহামারী করোনা পরিস্থিতিতে অসহায় ও ছিন্নমূল জনসাধারণের পাশে থাকার প্রতিজ্ঞা নিয়ে চারুশিল্পীরা পহেলা বৈশাখে নববর্ষের উপহার হিসেবে অসহায় হতদরিদ্র মানুষকে খাদ্যদ্রব্য, আর্থিক সহায়তা প্রদান করবে। বৈশাখের সাথে সম্পৃক্ত যেমন ঢাকি, লোকজ শিল্পী, কাঠামো প্রস্তুত শিল্পী, লোকজ শিল্প সামগ্রী বিক্রেতা এবং বৈশাখের সাথে সম্পৃক্ত কর্মচারী, খুদে দোকানিসহ সাধারণ মানুষ সংকটে পড়েছে। এই সংকট উত্তরণে মৌসুমী শ্রমিকদের পাশে দাঁড়িয়ে মোবাইল ব্যাংকিং (বিকাশ, নগদ, রকেট, নেক্সস পে) মাধ্যমে নিকট সাহয্য পৌঁছে দেবে। এই সহযোগিতার আওতায় বাংলাদেশের সবগুলো চারুকলার সচ্ছল সাবেক/বর্তমান শিক্ষার্থীরাও থাকবে এবং পহেলা বৈশাখের পরেও আমাদের এই কার্যক্রম চলমান থাকবে।
এবারের পহেলা বৈশাখে মঙ্গল শোভাযাত্রা আয়োজনের দায়িত্বে থাকা চারুকলার ২২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ফাহিম ইসলাম লিমন কালের কণ্ঠকে বলেন, জাতির ক্রান্তিলগ্নে এসব কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। শিল্পীদের সকলের অংশগ্রহণে একটি তহবিল গঠন করা হয়। করোনায় সংকটে পড়া মানুষকে সহযোগিতা প্রদান ও বাস্তায়নে তরুণ চিত্র শিল্পী সংসদের সহায়তায় স্বেচ্ছাসেবী দল তৈরি করা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে সকল নিয়ম কানুন মেনে, কোনো প্রকার ভিড় ও জমায়েত না করে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘শিল্পীদের কেউ অসুস্থ হলে করোনা অথবা অন্যান্য অসুখের জন্য হাসপাতাল অথবা ডাক্তারের প্রয়োজন হলে তাদেরকে সাহায্য করা হবে। ইতিমধ্যে চারুকলা অনুষদ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমেএমইউ) চিকিৎসকেরা মিলে সল্প খরচে ‘ফেস শিল্ড’ তৈরি করেছে। যা করোনা চিকিৎসায় চিকিৎসকদের রক্ষার কাজে খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করছে।
তিনি বলেন, কোয়ারেন্টিন সময়ে কন্টেম্পোরারি আর্টওয়ার্ক বা সমসাময়িক শিল্পকর্ম বা চিত্রকর্ম নিয়ে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এই শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে। যেখানে সারা বাংলাদেশ থেকে শিল্পীরা অংশ গ্রহণ করতে পারবে। ‘Young Artist Association’ নামে ফেসবুক গ্রুপে যেকেউ নিজের শিল্পকর্মের ছবি পাঠাতে পারবেন। প্রদর্শনীর জন্য বাংলাদেশের স্বনামধন্য শিল্পীগণের সমন্বয়ে গঠিত জুরি বোর্ড ছবি নির্বাচিত করবেন।’
সূত্রঃ কালের কণ্ঠ