আসামি–পুলিশ বেশির ভাগের মুখে ছিল না মাস্ক

আসামি, বিচারপ্রার্থী, পুলিশ ও আইনজীবীদের পদচারণে মুখর ছিল চট্টগ্রামের আদালতপাড়া। কিন্তু বেশির ভাগেরই মুখে ছিল না মাস্ক। মানা হয়নি স্বাস্থ্যবিধি। আজ সোমবার সরেজমিন ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
বিষয়টি আদালতেরও নজরে এসেছে। কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা আসামিদের মুখে মাস্ক না থাকায় বিষয়টি ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে আজ এক নির্দেশও দিয়েছেন আদালত। চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. রবিউল আলম প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ও চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ককে নির্দেশ দেন।
সরেজমিন দেখা যায়, নগর ও জেলার ৩২ থানায় গ্রেপ্তার হওয়া আসামি ও মামলায় হাজিরা থাকা বন্দীদের কারাগার থেকে আদালতে আনা হচ্ছে। তাঁদের প্রথমে আদালত ভবনের নিচতলায় জেলা ও মহানগর হাজতখানায় রাখা হচ্ছে। সেখান থেকে নির্ধারিত আদালতে তোলা হচ্ছে আসামিদের। দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা তাঁদের আনা–নেওয়া করছেন। কিন্তু আসামি ও দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যের বেশির ভাগেরই মুখে মাস্ক নেই। মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব। আদালতপাড়ায় একই অবস্থা দেখা গেছে বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীদের অনেকের ক্ষেত্রেও।
আসামিদের মাস্ক না থাকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মহানগর হাজতখানার ইনচার্জ অংশুমান দেব তাঁর কার্যালয়ে বলেন, কারও মাস্ক না থাকলে তাঁরা দিয়ে দেন অথবা আসামিকে কিনে দেন। কিন্তু সরেজমিন দেখা গেছে, মাস্ক ছাড়াই আসামিদের হাজতখানা থেকে আদালতে তোলা হচ্ছে।
আইনজীবীরা জানান, প্রতিদিন গড়ে আসামি, বিচারপ্রার্থীসহ প্রায় ১০ হাজার লোক আদালত প্রাঙ্গণে আসা–যাওয়া করেন।
আদালত ভবনের দ্বিতীয় তলায় দেখা যায়, একটি মাদক মামলার আসামি রফিকুল ইসলামকে হাতকড়া পরা অবস্থায় আদালতে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। কিন্তু তাঁর মুখে মাস্ক নেই। দায়িত্বরত কনস্টেবলের মুখেও নেই মাস্ক। তাঁর নেমপ্লেটও নেই। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন মামলায় হাজিরা ও গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের ভিড় দেখা গেছে দ্বিতীয় তলার বারান্দায়।
অন্যদের সঙ্গে কথা বলার সময় পুলিশ সদস্যের মুখে মাস্ক থাকলেও তা থুতনির নিচে। আজ বেলা সাড়ে তিনটায় আদালত এলাকায়
অন্যদের সঙ্গে কথা বলার সময় পুলিশ সদস্যের মুখে মাস্ক থাকলেও তা থুতনির নিচে। আজ বেলা সাড়ে তিনটায় আদালত এলাকায়ছবি: জুয়েল শীল
ইয়াবা উদ্ধারের মামলায় আজ দুপুরে চট্টগ্রাম কারাগার থেকে আসামি মমতাজ মিয়াকে আদালত ভবনের দ্বিতীয় তলায় চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. রবিউল আলমের আদালতে হাজির করা হয়। তখন তাঁর মুখে মাস্ক ছিল না। বিষয়টি বিচারকের নজরে আসে। পরে লিখিত আদেশ দেন আদালত। আদেশে বলা হয়, ‘আসামি মমতাজের মুখে মাস্ক নেই। উপস্থিত অন্য আসামিদের মুখেও মাস্ক নেই। কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনায় বিষয়টি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এই অবস্থায় আসামিদের আদালতে প্রেরণে মাস্ক সরবরাহ ও আসামিদের মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে আইজি প্রিজন ও চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ককে নির্দেশ দেওয়া হলো।’
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক মো. শফিকুল ইসলাম খান আজ প্রথম আলোকে বলেন, কারাগার থেকে আদালতে পাঠানোর সময় বন্দীদের মাস্ক পরানো হয়। এরপরও কেন আদালতে তাঁরা মাস্ক ছাড়া ছিলেন, খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
আইনজীবী, বিচারপ্রার্থী থেকে শুরু করে সবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা উচিত বলে মনে করেন চট্টগ্রাম মহানগর সরকারি কৌঁসুলি মো. ফখরুদ্দিন চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আদালতের বারান্দা ও আশপাশের এলাকায় বিচারপ্রার্থীদের ভিড় থাকে। করোনার ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে সচেতন হতে হবে।
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ এইচ এম জিয়া উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, আদালতে প্রতিদিন প্রচুর লোকের ভিড় হয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাতে আদালতপাড়ায় বিচারপ্রার্থীরা আসা-যাওয়া করেন, সে জন্য সচেতন করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এখন আইনজীবীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাঁরা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করছেন। মক্কেলরা যাতে মাস্ক পরেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন, সে জন্য সচেতন করতে আইনজীবীদের বলা হচ্ছে।
সূত্রঃ প্রথম আলো