আমের ক্রেতা ও ভোক্তারা রাসায়নিকের ভয়ে ঝুঁকেছে কুরিয়ারে

শান্তিনগরের বাসিন্দা আলেয়া বেগম গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে দুই মেয়েকে স্কুল থেকে নিয়ে ফেরার পথে এসএ পরিবহনের কুরিয়ার সার্ভিস কার্যালয়ে আসেন। কুরিয়ার সার্ভিসে নাটোর থেকে তাঁর নামে ২০ কেজি আম পাঠানো হয়েছে শান্তিনগরে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয়ের ঠিকানায়।
আলেয়া বেগমের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, মৌসুম শুরু হওয়ার পর থেকে রাজশাহীর নাটোরে থাকা এক আত্মীয়ের মাধ্যমে কুরিয়ার সার্ভিসে আম আনছেন। রাজধানীর বাজারে ওঠা আমের ওপর ভরসা না থাকায় পরিবারের চাহিদা অনুযায়ী সরাসরি আম আনিয়ে নিচ্ছেন তিনি। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘বাজারের আম মেডিসিন দিয়ে পাকানো হয়। স্বাদটাও আর সে রকম থাকে না। আমার আত্মীয় দেখেশুনে ভালো আমই পাঠান।’
সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের এলিফ্যান্ট রোড শাখায় চলতি আমের মৌসুমে মোটামুটি সারা দিনই ভিড় লেগে থাকছে। আত্মীয়-স্বজন ছাড়াও বিভিন্নভাবে যোগাযোগের মাধ্যমে নাটোর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রংপুরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আম আনছে অনেকেই। আম নিতে আসা শরিফুল ইসলাম নামের একজন জানালেন, তাঁর গ্রামের বাড়ি রংপুরে। বাড়ি থেকে কয়েক দিন পরপরই আম পাঠানো হয়। নিজেদের গাছের আম শেষ হয়ে গেছে। এ জন্য প্রতিবেশীর বাগান থেকে কিনে এক মণ আম পাঠিয়েছে। এখান থেকে আবার অর্ধেকটা আরেক বন্ধুকে দিতে হবে। বললেন, ‘ঢাকায় বাজার বা ফুটপাত থেকে আম কিনে স্বস্তি পাওয়া যায় না। ফরমালিন আর কার্বাইডের ভয়ও থাকে। বাড়ি থেকে যখন সরাসরি পাঠায় তখন এটা খারাপ হওয়ার সুযোগ থাকে না।’
শুধু নিজেরা খাওয়ার জন্য নয়, মৌসুমি অনেক ব্যবসায়ীও বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিদিন কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ঢাকায় আম আনছে। বেশি আম উৎপাদন হয় এমন জেলাগুলোর যারা ঢাকায় থাকে তাদের মাধ্যমেই মূলত ঢাকায় বসবাসকারীরা যোগাযোগ করে আম নিয়ে আসে। ফরমালিন, কার্বাইডের হাত থেকে রক্ষা এবং ভালো মানের আমের জন্যই মূলত এই প্রক্রিয়ায় আম কিনছে ভোক্তারা।
বছরের অন্যান্য সময়ে বিভিন্ন কুরিয়ার সার্ভিসের ব্যবসা একটু ঢিমেতালে চললেও আমের এই মৌসুমে বরাবরই ব্যবসা ভালো যায়। রাজশাহী অঞ্চল থেকে প্রতি কেজি আম আনতে কুরিয়ার সার্ভিসগুলো কেজিপ্রতি ১৫ থেকে ২০ টাকা খরচ নিয়ে থাকে।
কুরিয়ার সার্ভিস সেবা প্রদানকারী এসএ পরিবহন সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে প্রতিদিন ২৫-৩০ টন, রংপুর থেকে ১৫ টন, খাগড়াছড়ি থেকে পাঁচ টন, নাটোর ও নওগাঁ থেকে পাঁচ টন করে আম আসছে। সে হিসাবে এসএ পরিবহনের মাধ্যমে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৫৫ টন আম ঢাকায় আসছে। তবে মৌসুম শেষের দিকে হওয়ায় আম কিছুটা কম আসছে। ভরা মৌসুমে ৮০ থেকে ১০০ টন করে আম এসেছে প্রতিদিন।
প্রায় একই চিত্র সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসেও। এই সার্ভিসের মাধ্যমেও গড়ে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ টন আম আসছে বলে জানা গেছে। করতোয়া, কন্টিনেন্টালসহ আরো কয়েকটি কুরিয়ার সার্ভিসেও ঢাকায় আম আসছে।
এসএ পরিবহনের উপ-মহাব্যবস্থাপক আবু সাইদ মোহাম্মদ সাদরুদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কয়েক বছর ধরেই আমের সিজনে আমাদের ব্যস্ত সময় কাটছে। গত বছর আমের উৎপাদন ভালো ছিল। তখন মৌসুমে প্রতিদিন প্রায় ১৫০ টন বা তারও বেশি আম এসেছে। উৎপাদন খারাপ হওয়ায় এবার সেটা ৮০-১০০ টনে নেমে গেছে।’
এদিকে ফরমালিন ও কার্বাইড ইস্যুতে বরাবরই ঢাকার বাজারে বিক্রি হওয়া আমের ওপর গ্রাহকের আস্থা কম। রাসায়নিকের মিশ্রণ রোধে গত মে মাসে সারা দেশের ফলের বাজার ও আড়তগুলো তদারকির জন্য মনিটরিং টিম গঠনের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) বিভিন্ন বাজারে আম পরীক্ষা করে তাতে ফরমালিনের অস্তিত্ব পায়নি।
সূত্রঃ কালের কণ্ঠ