বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান নৈতিকভাবে একে অপরের চেয়ে উন্নত নয়: অরুন্ধতী

ভারতীয় স্টেটের সমালোচনা করে সেনা মোতায়েন প্রসঙ্গ নিয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রশংসা করেন আলোচিত লেখিকা অরুন্ধতী রায়। ২০১১ সালে ওই বক্ততা দিলেও সম্প্রতি সেটি ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়েছে। সে ভিডিওতে দেখা যায়, ভারত ও পাকিস্তানের তুলনা করে অরুন্ধতী ভারতের সমালোচনায় মুখর হয়েছেন। আর এবার তিনি বললেন, বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান নৈতিকভাবে একে অপরের চেয়ে উন্নত নয়।
এদিকে অরুন্ধতীর ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর থেকেই চলছে আলোচনা-সমালোচনা। এরপরই এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, কাশ্মীর নিয়ে ভারত পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বিপজ্জনক মাত্রায় বেড়ে গেছে। নয় বছর আগের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরছে। আর ওই ভিডিওতে আমি বলেছিলাম নিজের নাগরিকদের ওপর ভারতীয় সরকারের চালনো অবিরাম যুদ্ধর কথা। মনে হচ্ছে আমি বলছিলাম যে, পাকিস্তান তার ‘নিজের’ জনগণের বিরুদ্ধে ভারতের মতো সেনাবাহিনীকে কখনো মোতায়েন করেনি।
তিনি আরো বলেন, আমরা সবাই আমাদের জীবনের কোনো না কোনো সময় অসাবধানতাবশত চিন্তাহীন বা বেকুবদের মতো কিছু কথা বলে যাই। ভাইরাল হওয়া ছোট ওই ভিডিও ক্লিপটি কোনোভাবেই-আমি যা বিশ্বাস করি বা বছরের পর বছর ধরে আমি যা লিখেছি তা প্রতিনিধিত্ব করে না। তবুও ওই ভিডিওটি অনেক সমালোচনা বয়ে আনছে। ওই ভিডিওটি যদি কোনো ধরনের বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে; তাহলে আমি তার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।
তিনি বিবৃতি বলেন, পাকিস্তান সরকার বেলুচিস্তানে কী করছে এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাংলাদেশে যে গণহত্যা করেছে, সে সম্পর্কে আমার মতামত কখনই অস্পষ্ট নয়। ওইগুলো সবসময় আমার লেখার অংশ ছিলো।
২০১৭ সালে প্রকাশিত দ্য মিনিস্ট্রি অব আটমোস্ট হ্যাপিনেস নামক উপন্যাসে বিপ্লব দাশগুপ্ত ওরফে গারসন হোবার্ট নামের একটি চরিত্র সৃষ্টি করেছিলাম। ভারতীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তার ওই চরিত্রটি কাশ্মীরে কাজ করেছিলেন। উপন্যাসে বিপ্লব দাশগুপ্ত বলেন, এটি সত্য যে আমরা কাশ্মীরে ভয়ানক কিছু কাজ করেছি। তবে আমি বলতে চাই, পাকিস্তান সেনাবাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে কী করেছিল? ওখানে গণহত্যার একটি স্পষ্ট ঘটনা ছিলো। ওই ঘটনাগুলো ছিলো সবার সামনে উন্মুক্ত এবং বন্ধ।
উপন্যাসের ওই চরিত্র আরো বলেন, ভারতীয় সেনাবাহিনী যখন বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছিল, তখন কাশ্মীরিরা এটিকে ‘ঢাকার পতন’ নামে অভিহিত করেন। তারা আসলে অন্যের কষ্ট বোঝেন না। পাকিস্তান যে বেলুচিস্তান প্রদেশ দখল করে আাছে; তারা কাশ্মীরিদের সম্পর্কে চিন্তা করে না। যে বাংলাদেশকে আমরা স্বাধীনতা এনে দিলাম; সেই বাংলাদেশিরাই হিন্দুদের হত্যা করছে। পুরাতন কম্যুনিস্টরা স্ট্যালিনের গুলাগকে ‘বিপ্লবের প্রয়োজনীয় অংশ’ বলে অভিহিত করে। আমিরিকানরা এখন ভিয়তনামের মানব অধিকার নিয়ে কথা বলে। আমাদের যা আছে তা আসলে একটি শ্রেণির সমস্যা। আমাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হয়নি।
আলোচিত লেখিকা অরুন্ধতী রায় বলেন, অবাক হওয়ার কিছু নেই যে হিন্দু জাতীয়তাবাদীরা নতুন/পুরানো গুজবকে কেন্দ্র করে ক্ষোভ ও উত্তেজনা জন্ম দেওয়ার জন্য ছুটে চলেছে। তারা বাংলাদেশের গণহত্যা এবং পাকিস্তানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কাজ সম্পর্কে আমার ধারণা অস্বীকার করেছে। আমি বিশ্বাস করি না যে ভারত, পাকিস্তান বা বাংলাদেশ যে কোনো উপায়ে নৈতিকভাবে একে অপরের চেয়ে উন্নত। বর্তমানে ভারতে খাঁটি ফ্যাসিবাদের স্থাপত্য স্থাপন করা হচ্ছে। যেই প্রতিহত করতে যাবে, সেই ট্রোলড, কারাগারে বা মারধরের শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে থাকবে। কিন্তু এটিকে প্রতিহত করা হবে।
এদিকে মোদি সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের তুমুল সমালোচনা এর আগেও করেছেন অরুন্ধতী রায়। দেশ জুড়ে হিংসার রাজনীতি নিয় সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনের আগে ২০০ জন বুদ্ধিজীবীর সঙ্গে একটি চিঠি অরুন্ধতী পাঠান প্রধানমন্ত্রীকে। এ ছাড়াও জাতিসংঘে ভারত বিরোধী বক্তব্য রাখতে গিয়ে পাক প্রতিনিধি মলিহা লোধি বারবার কাশ্মীর নিয়ে অরুন্ধতীর ভারত বিরোধী মন্তব্যকে হাতিয়ার করে তুলে ধরেন।
পরে ৫ আগস্ট সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের মাধ্যমে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করলে কাশ্মীরিদের পক্ষালম্বন করেন অরুন্ধতী। তিনি কাশ্মীর ইস্যুকে কেন্দ্র করে ভারতীয় মুসলিমদের ওপর অত্যাচারের খড়গ নেমে আসতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন। এ নিয়ে তিনি লেখালেখিও করেছেন। এরপরপরই ভিডিওটি ভাইরাল হয়।
সূত্রঃ কালের কণ্ঠ