শিশুর হৃদরোগের ঝুঁকি

ডায়াবেটিস মায়ের গর্ভস্থ শিশুর হৃদরোগের ঝুঁকি সাধারণ শিশুর তুলনায় তিন থেকে চার গুণ বেশি। এসব শিশুর জন্মগত হার্টের ছিদ্র, হার্টের ভাল্ভের ত্রুটি, হার্টের গঠন ও রক্তনালির ত্রুটি, হার্ট মাংসপেশির অস্বাভাবিক বৃদ্ধি বা এইচসিএম এবং ফুসফুসের রক্তনালির উচ্চ রক্তচাপ বা পিপিএইচ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বহুগুণ বৃদ্ধি পায়।
যে কারণে হৃদরোগের ঝুঁকি বেশি
ডায়াবেটিস মায়ের শরীরে গল্গুকোজের আধিক্যই শিশুর হৃদরোগের কারণ। এ ছাড়া গল্গুকোজ কমানোর জন্য শিশুর অগ্ন্যাশয় যে অতিরিক্ত ইনসুলিন নিঃসরণ করে, তা থেকে শিশুর হার্টের মাংসপেশির বাড়তি বৃদ্ধি ঘটে। জন্ম-পরবর্তী শিশুর রক্তে গল্গুকোজের স্বল্পতা, জন্মকালীন অক্সিজেনের অভাব, শ্বাসকষ্ট, পলিসাইথেমিয়া বা রক্তের ঘনত্ব বেড়ে যাওয়া- এই বিষয়গুলো শিশুর পিপিএইচ রোগের আশঙ্কাকে বাড়িয়ে দেয়।
রোগের লক্ষণ ও উপসর্গ
ডায়াবেটিস মায়ের শিশুর ওজন অস্বাভাবিক হওয়ার আশঙ্কা থাকে। শিশু নাদুসনুদুস এবং হূষ্টপুষ্ট হওয়ায় মায়ের স্বাভাবিক ডেলিভারি অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব হয় না। শিশুর বাড়তি ওজনের কারণে তার কোনো রোগ আছে কিনা সে ব্যাপারেও আত্মীয়স্বজন তেমন সজাগ থাকেন না। কিন্তু এ ধরনের শিশুর হাইপোগ্রাইসেমিয়াজনিত খিঁচুনির আশঙ্কা থাকে। হাইপোগ্লাইসেমিয়া বা রক্তের গল্গকোজ কমে গেলে শিশুর ব্রেইনের স্থায়ী ক্ষতির সমূহ আশঙ্কা থাকে। এ জন্য জন্মলগ্ন থেকেই শিশুর বিকাশজনিত সমস্যাগুলো দেখা দিতে পারে। শিশুর হৃদরোগের ধরন অনুযায়ী তার লক্ষণ প্রকাশ পেয়ে থাকে। যেমন- শিশুর শ্বাসকষ্ট, শরীর নীলাভ হয়ে যাওয়া, হার্টের দ্রুত সঞ্চালন, অস্বাভাবিক হৃদকম্পন ইত্যাদি।
রোগ নির্ণয়
রক্তের গল্গুকোজের মাত্রা ঘন ঘন পরীক্ষা করে দেখতে হবে। গল্গুকোজের পাশাপাশি রক্তের ক্যালসিয়াম, ইলেকট্রোলাইট পরীক্ষা করা উচিত। বুকের এক্স-রে, ইসিজি এবং কালার ইকোকার্ডিওগ্রাম পরীক্ষা করে শিশুর হৃদরোগ আছে কি-না তা দেখতে হবে।
জন্মগত ত্রুটি টিজিএ বা হার্টের গঠন উল্টে গেলে শিশুর যথাযথ চিকিৎসা প্রদান নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে এনজিওগ্রাম পরীক্ষা করাতে হবে।
চিকিৎসা
জন্মের পর ডায়াবেটিস মায়ের গর্ভস্থ শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি রাখতে হবে এবং তাকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। তার রক্তের গল্গুকোজের মাত্রা নিয়মিত পরিমাপ করতে হবে এবং শিশুর শ্বাসকষ্ট বা হৃদরোগের অন্যান্য উপসর্গ প্রকাশ পায় কি-না সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। হার্টের মাংসপেশি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি বা এইচসিএম রোগটির যথাযথ চিকিৎসা নিলে স্বাভাবিক হয়ে আসে। শিশুর হৃদরোগ থাকলে নির্দিষ্ট ওষুধের মাধ্যমে বা প্রয়োজনে সার্জারি করে টিজিএ ওই হৃদরোগের যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। কখনও কখনও এই শিশুকে শিরাপথে স্যালাইন দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে বা শ্বাসকষ্ট কমানোর জন্য ভেন্টিলেটর ব্যবহারের প্রয়োজন হতে পারে।
রোগ প্রতিরোধ
১. গর্ভকালের শুরু থেকেই মায়ের ডায়াবেটিস আছে কি-না তা পরীক্ষা করতে হবে।
২. অ্যান্ডোক্রাইন বিশেষজ্ঞর তত্ত্বাবধানে গর্ভকালে মায়ের ডায়াবেটিস সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
৩. গর্ভস্থ শিশুর হার্টে ত্রুটি আছে কি-না তা গর্ভকালে ফিটাল ইকো পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে।
৪. জন্মের পর শিশুর হৃদরোগ প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় করতে হবে এবং যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে হবে।
[সহযোগী অধ্যাপক, শিশু হৃদরোগ বিভাগ, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটউট, ঢাকা [পুষ্টিবিজ্ঞানী]
সূত্রঃ সমকাল