ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনগুলো

১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও তার সঙ্গে আমার পরিচয় আরও আগে। আমার কিশোর বয়স থেকেই। বড়দের আলাপচারিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম (প্রায় সবাই তখন তাকে ‘বিশ্ববিদ্যালয়’ না বলে ‘ইউনিভার্সিটি’ বলত) বিশেষ মর্যাদার সঙ্গে উচ্চারিত হতো। তখন থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমার মনে এক অতুলনীয় সম্মানের স্থান করে নিয়েছিল। আর পরে, জ্ঞান সাধনার কেন্দ্র হিসেবে সেটি আমার কাছে তীর্থস্থান সমতুল্য বলে পরিগণিত হয়ে উঠেছিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আমার প্রথম সাক্ষাৎ-সংস্পর্শের সূচনা ঘটেছিল চার-পাঁচ বছর বয়সে। সে সময় আমি আমার আব্বা-আম্মার সঙ্গে ঢাকার নয়াপল্টনের বাসা থেকে এলিফ্যান্ট রোডে আমার চাচাতো বোনের বাসায় বেড়াতে যেতাম। ঘন ঘনই সেখানে যেতাম। যেতে হতো বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার ভেতর দিয়ে। নীলক্ষেত রোডের সারিবদ্ধ দেবদারু গাছের কাছে রিকশা থেকে নেমে হেঁটে সে বাসায় যেতাম। কখনো বা আবার বর্তমানে শামসুন্নাহার হল যেখানে নির্মাণ করা হয়েছে, সেখানে তখন স্থাপিত খেলার মাঠ অতিক্রম করে হেঁটে যেতে হতো। সেখানে জিমন্যাস্টিকসের ‘প্যারালাল বার’, ‘রিং’ ইত্যাদি দেখিয়ে আব্বা তার ছাত্রজীবনে যে এসব দিয়ে শরীর চর্চা করতেন, সেসব কাহিনি বলতেন।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সঙ্গে আমার প্রকৃত সাক্ষাৎ-পরিচয় হয়েছিল আরও পরে, আমার স্কুলজীবনের শেষ দিকে, বাষট্টি-তেষট্টি সালে। তখন ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’র কাকডাকা ভোরে প্রভাতফেরি করে শহীদ মিনারে আসতাম। সন্ধ্যায় সেখানে মঞ্চ তৈরি করে যে গণসংগীতের অনুষ্ঠান হতো, তাতে যোগ দিতে আসতাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা আরও বৃদ্ধি পেয়েছিল ১৯৬৫ সালে। সে বছরই আমি ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হয়েছিলাম। স্কুলজীবন থেকে কলেজে উত্তরণের সময়টাতেই আমি যুক্ত হয়ে পড়েছিলাম ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে। তখন থেকেই ছাত্র ইউনিয়নের নানা কাজে ও কর্মসূচিতে অংশ নিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বটতলা, মধুর ক্যান্টিনে শুরু হয়েছিল আমার নিত্য আসা-যাওয়া।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাস একসময়ে ছিল, এখন যেটি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের আউটডোর বিভাগ, সেই চত্বরে। প্রবেশের গেট দিয়ে ঢুকে হাতের ডান দিকে ছিল বিখ্যাত ‘মধুর ক্যান্টিন’। ম্যাট্রিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর একদিন ছাত্রনেতাদের আমন্ত্রণে সেখানে গিয়ে প্রথম চা-শিঙ্গাড়া খেয়েছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও সেই সঙ্গে ‘মধুর ক্যান্টিন’ও চানখাঁরপুল এলাকা থেকে নীলক্ষেতে স্থানান্তরিত হওয়ার পথে। প্রায় প্রতিদিনই ঢাকা কলেজে ক্লাস শেষে মধুর ক্যান্টিনে চলে আসতাম। ছাত্র আন্দোলন, ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত থাকায় ক্যাম্পাসে মিছিল-মিটিংয়ে নিয়মিতই উপস্থিত হতাম।
পাকিস্তানের দ-মু-ের কর্তা তখন স্বৈরাচারী ‘লৌহমানব’ ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান। শ্রেণিগত শোষণের পাশাপাশি ‘মৌলিক গণতন্ত্র’ ও জাতিগত নিপীড়নের জাঁতাকলে দেশবাসী তখন নিষ্পিষ্ট হচ্ছিল প্রতিনিয়ত। পূর্ব পাকিস্তানে কুখ্যাত মোনায়েম খান ছিল তার পদলেহী গভর্নর। সেই আইয়ুব-মোনায়েমি শাসনকালে ছাত্রদের মধ্যে এনএসএফ নামে সরকারের পোষ্য সন্ত্রাসী গুন্ডা বাহিনী গড়ে তোলা হয়েছিল। ১৯৬৬ সালে সরকারি কলেজের ছাত্র বেতন ১ টাকা বৃদ্ধি করায় সেটিকে ‘শিক্ষা সংকোচনের’ ষড়যন্ত্র বলে চিহ্নিত করে, তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করার সিদ্ধান্ত হয়। ধর্মঘট আহ্বান করা হয়। ঢাকা কলেজ ছিল কঠোর সরকারি নিয়ন্ত্রণে। সেখানকার প্রিন্সিপালের রক্তচক্ষুকে চ্যালেঞ্জ করে আমরা ধর্মঘট করার ‘দুঃসাহসী’ পদক্ষেপ সফল করেছিলাম। মধুর ক্যান্টিনে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতাদের পরামর্শ নিয়ে এই কর্মসূচি পালনের ক্ষেত্রে আমি নেতৃত্ব দিয়েছিলাম।
এ জন্য আমিসহ চারজনকে ঢাকা কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। আমরা জগন্নাথ কলেজে ভর্তি হয়ে সেখান থেকে ইন্টারমিডিয়েটের শেষ বর্ষের পরীক্ষা দিয়েছিলাম। ১৯৬৬ সালে ৭ জুনের হরতালে পিকেটিং করার সময় গ্রেপ্তার হয়ে এক মাসের কারাদ- ভোগের মধ্য দিয়ে আমার নানা পর্বের কারাবাসের সূত্রপাত ঘটেছিল। এসবের মধ্য দিয়ে আন্দোলন-সংগঠনের কাজে আমার সচেতন-সক্রিয়তা আরও বেড়েছিল। ক্যাম্পাসে ও মধুর ক্যান্টিনে আমার যাতায়াত তখন থেকে আরও বেড়ে গিয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাজীবন শুরু হওয়ার আগেই এভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ‘আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে’ পরিণত হয়েছিল। ইন্টারমিডিয়েট পাস করে ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হয়েছিলাম। শুরু হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার আনুষ্ঠানিক শিক্ষাজীবন। আবাসিক ছাত্র ছিলাম মহসিন হলের। মহসিন হল সে বছরই চালু হওয়ায় নবনির্মিত হলে আমাদেরই প্রথম পদার্পণ করার সুযোগ হয়েছিল। ভালো ছাত্র হওয়ার সুবাদে শুরুতেই একটা সিঙ্গেল রুমও বরাদ্দ পেয়েছিলাম। রুম নম্বর ৬৬০। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাজীবনের সবটাই কাটিয়েছি সেই রুমে। অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হয়ে ছাত্র আন্দোলনের ক্রমবর্ধমান কাজের পাশাপাশি মন দিয়েছিলাম লেখাপড়ায়। ক্লাস, লাইব্রেরি ওয়ার্ক, নোট তৈরি, টিউটোরিয়াল ইত্যাদি কাজে নিজেকে একাগ্রভাবেই নিয়োজিত রেখেছিলাম।
সাবসিডিয়ারি বিষয় ছিল পরিসংখ্যান আর সমাজবিজ্ঞান। এসবেও নিয়মিত ক্লাস করতাম। আমার নিজের বিভাগের অধ্যাপকদের লেকচারের বাইরেও অন্যান্য বিভাগের কিছু কিছু ক্লাসে শুধু লেকচার শুনতে আগ্রহ নিয়ে যেতাম। বিশেষ আকর্ষণ অনুভব করতাম দর্শন বিভাগের ড. গোবিন্দ্র চন্দ্র দেব (জিসি দেব) ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর মোজাফ্ফর আহমদ চৌধুরীর (ম্যাক স্যার) প্রমুখদের ক্লাস-লেকচারের প্রতি। (প্রফেসর মোজাফ্ফর পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হয়েছিলেন। জিসি দেবকে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী হত্যা করেছিল।) ক্লাসের অন্যতম সেরা ছাত্র হওয়ায় সবাই একমত হয়ে ফার্স্ট ইয়ারে ‘শ্রেণি প্রতিনিধি’ নির্বাচনে আমাকে প্রার্থী করবে বলে স্থির করে রেখেছিল। এ বিষয়ে ছাত্রছাত্রীদের রায় নেওয়ার জন্য ক্লাস-শিক্ষকের উপস্থিতিতে কার্যক্রম শুরু হয়েছে, তখন এনএসএফের ‘বদী’ ও ‘মালেক’ ক্লাসে ঢুকে আমার বুকে ড্যাগার ঠেকিয়ে আমাকে বের করে নিয়ে গিয়েছিল। এই বদী-ই একাত্তরে দুর্ধর্ষ ‘ক্র্যাক প্লাটুনের’ সদস্য হয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছিল এবং ঢাকায় সফল ‘অপারেশন’ পরিচালনা করেছিল। যুদ্ধে সে শহীদ হয়েছিল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগের ও সাবসিডিয়ারি সাবজেক্টের ক্লাস আর পরীক্ষার বাইরে যতটুকু সময়, সবটুকুই আমার কাটত ছাত্র আন্দোলনে, হল ও ক্যাম্পাসের নানা যৌথ কাজে, সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে শিক্ষাজীবন আর ছাত্র আন্দোলনের কাজ দুটোই সমান্তরালভাবে চলত। নিয়মিত মিছিল-মিটিংয়ে উপস্থিত থাকা, নানা কো-ক্যারিকুলার কাজে নিবিড়ভাবে যুক্ত থাকা প্রভৃতি কারণে গোটা ক্যাম্পাসে প্রায় সবার কাছেই আমি দ্রুতই পরিচিত হয়ে উঠেছিলাম। দেখতে দেখতে প্রথম বর্ষ কেটে গেল। প্রতিবছর ডিপার্টমেন্টে যারা প্রথম হতো তাদের পুরস্কৃত করার জন্য ‘ট্যালেন্ট শো’ হতো। অনুষ্ঠান হতো টিএসসিতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সব শিক্ষক থাকতেন অনুষ্ঠানে। আমি সেবার অর্থনীতি বিভাগের প্রথম বর্ষের পরীক্ষায় প্রথম হয়েছি। মনে আছে, আমার নাম ঘোষণা করার আগে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিতে গিয়ে একজন শিক্ষক গৎবাঁধা বয়ানে বলেছিলেন, ‘এখন আমরা আপনাদেরকে পরিচয় করিয়ে দেব এমন একজনের সঙ্গে, যে এবার কলা ভবনের সেরা বিভাগের সেরা ছাত্র। যে সারাদিন ক্লাস, নোট, লাইব্রেরি ওয়ার্ক নিয়ে লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকে। তাকে এখন আপনারা স্বচক্ষে দেখতে পারবেন…।’ এ কথা বলার পর যখন আমার নাম ঘোষণা করা হলো এবং আমি মঞ্চে প্রবেশ করলাম, তখন ‘লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকা, বইয়ের পোকা’ বলে পরিচিত করে দেওয়া হিসেবে তাদের অতি চেনা মুখ সেলিমকে দেখে হলভরা সব ছাত্রছাত্রী অট্টহাসিতে ফেটে পড়েছিল। ক্যাম্পাসে সে সময় ছিল আইয়ুব-মোনায়েমের পদলেহী ছাত্র সংগঠন এনএসএফের সন্ত্রাসের রাজত্ব। ছাত্রছাত্রীদের ভয় দেখানোর জন্য তারা গলায় জ্যান্ত সাপ ঝুলিয়ে ক্যাম্পাসে আসত। হকিস্টিক, কিরিচ, ড্যাগার এসব নিয়ে হরহামেশাই ক্যাম্পাসে ও হলগুলোয় হামলা চালাত। রুমে আগুন দিত।
ক্যান্টিনে, মেসে বিনা পয়সায় জোর করে খাওয়া-দাওয়া করত। এদের ভয়ে সাধারণ ছাত্ররাও সব সময় তটস্থ থাকত। সবাই এদের চরম ঘৃণার চোখেই দেখত। কেউ এদের পেছনে পেছনে ঘুরত না। (দুঃখজনক হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন নতুন নামে ক্ষমতাসীনদের সন্ত্রাসী লাঠিয়াল বাহিনীর দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এটি যেন ‘নব্য-এনএসএফ’-এর রাজত্ব!) রাজনৈতিক কারণে প্রায়ই এনএসএফের গুন্ডারা ছাত্র ইউনিয়নের ওপর হামলা করত। আমরা তা মোকাবিলার চেষ্টা করতাম। কিন্তু ওদের হাতে অস্ত্র থাকার কারণে, আক্রান্ত হয়ে আমাদের কিছু নেতাকর্মী প্রতিবারই আহত হতো। তখন কেউ কেউ ক্ষোভে উত্তেজিত হয়ে বলত, এভাবে আর কত মার খাওয়া যায়! এবার প্রতিরোধ করতে হবে। আমরাও পাল্টা আক্রমণ করব। ব্যস, সবাই তখন দল বেঁধে শরীরচর্চা করতে নেমে পড়তাম। কেউ কেউ নিয়মিত ‘কারাতে’র প্রশিক্ষণে যেত। এনএসএফের গুন্ডারাও হয়তো আমাদের এসব উদ্যোগ দেখে একটু থমকে দাঁড়াত। তবে কিছুদিন পর আবার সেই আগের অবস্থাই ফিরে আসত। ছাত্র সংগঠনগুলো তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ছাড়াও প্রায়ই শহরের মূল রাস্তা ধরে বড় বড় মিছিল করত। এসব মিছিলের একটি প্রধান গান থাকত ‘কৃষক-শ্রমিক-ছাত্র-জনতা এক হও, এক হও!’ মিছিলের পথও হতো অনেক দীর্ঘ। এখনকার মতো মিছিল শুধু কলা ভবন বা ক্যাম্পাসেই সীমাবদ্ধ থাকত না। টিভি ক্যামেরা বা ফটোগ্রাফারের মোহে মিছিল এখনকার মতো ‘লম্বার চেয়ে চওড়া বেশি’ হতো না। সাধারণত মিছিল শুরু হতো শহীদ মিনার চত্বর থেকে। তার পর প্রেসক্লাব, পল্টন মোড়, গুলিস্তান, নবাবপুর, ইসলামপুর, আরমানিটোলা, জেল গেট হয়ে আবার শহীদ মিনারে এসে শেষ হতো। অনেক সময় খ- খ- মিছিল ও পথসভাও হতো। সাধারণত গুলিস্তানের সামনের কামানের ওপর দাঁড়িয়ে (যেটি বর্তমানে ওসমানী উদ্যানে রাখা আছে), নবাবপুর ঢোকার পথে ডান দিকের কোনায়, রথখোলার চৌরাস্তা, সদরঘাট, নিউমার্কেট, বেবি আইসক্রিমের মোড়, লালবাগের মোড় ইত্যাদি স্থানে পথসভাগুলো অনুষ্ঠিত হতো।
তখন মাইকের ব্যবহার এখনকার মতো এতটা ছিল না। ছাত্রনেতাদের খালি গলাতেই কিংবা টিনের চোঙা মুখের সামনে ধরে বক্তৃতা করতে হতো। পরে একসময় একটু একটু করে মাইকের ব্যবহার শুরু হয়েছিল। ষাটের দশকজুড়ে লাগাতারভাবে ছাত্রসমাজের শিক্ষার ন্যায্য দাবি, গণতান্ত্রিক অধিকার, জাতীয় আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার, সাম্রাজ্যবাদী শোষণ-আধিপত্য থেকে মুক্তি, প্রগতিশীল সমাজ নির্মাণ, বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন দাবিতে উত্তাল সংগ্রাম অব্যাহত ছিল। এসব সংগ্রামের অন্যতম মূল কেন্দ্র ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। “তিন বছরের ডিগ্রি কোর্স বাতিল কর, রবীন্দ্রসংগীত-রবীন্দ্র সাহিত্যের ওপর আক্রমণ বন্ধ কর, সাম্প্রদায়িক বই ‘দেশ ও কৃষ্টি’ বাতিল কর, বাঙালিকে ভুট্টা খেতে বাধ্য করা যাবে না” এ ধরনের নানা দাবিতে একের পর এক সংগ্রামের ধারা অগ্রসর হয়েছে। ’৬২-র শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৪-র গণতান্ত্রিক আন্দোলন, ’৬৬-র ছয় দফা আন্দোলন, ছাত্রসমাজের ১১ দফা দাবিতে ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান প্রভৃতিসহ নানা ইস্যুতে ছোট-বড় অসংখ্য সংগ্রামের একেবারে কেন্দ্রবিন্দুতে থাকার সুযোগ ও সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। ক্রান্তিকালের কারিগর হতে পারা কেবল রোমাঞ্চকরই নয়। এর গৌরব অতুলনীয়। এসব ধারাবাহিক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে দেশ অগ্রসর হচ্ছিল একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ অভিমুখে। মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে একাত্তরের বিশ্ববিদ্যালয়ের সেসব অগ্নিঝরা দিনগুলো নিয়ে কিছু কথা আগামী কিস্তিতে লেখার ইচ্ছা রইল।
লেখকঃ মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম : সভাপতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি
সূত্রঃ আমাদের সময়